ভারতের হাত ধরেই স্বাধীনতা এসেছিল। কিন্তু বিজয় দিবসে ভারতের জন্য একটাও শব্দ খরচ করলেন না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। সোমবার ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানের ৯৩,০০০ ফৌজির আত্মসমর্পণের ঘটনার ৫৩ বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দেন, তাতে সৌজন্যের খাতিরেও ভারতের নামটুকু নেননি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। প্রায় ৩০ মিনিটের ভাষণের অধিকাংশ সময়টাই ‘পৃথিবীর ঘৃণ্যতম স্বৈরাচারী শাসক’ শেখ হাসিনাকে আক্রমণ শানিয়েছেন। আর নিজের সরকারের ঢাক পিটিয়েছেন।
ভারতীয় জওয়ানদের স্যালুট মোদীর
তিনি ভারতের প্রতি কোনও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেও ভারতীয় জওয়ানদের স্যালুট জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘আজ বিজয় দিবসে ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে অবদান রাখা বীর জওয়ানদের সাহসিকতা এবং আত্মবলিদানকে সম্মান জানাচ্ছি। তাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং অবিচল সংকল্পই আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রেখেছিল এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। তাঁরা যে আত্মত্যাগ করেছেন, তা চিরকাল প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের দেশের ইতিহাসে গেঁথে থাকবে।
আর আজকের দিনটা যে বাংলাদেশের ইতিহাসেও গেঁথে থাকবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু ইতিহাস তৈরির ক্ষেত্রে যাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, তাঁদের উপেক্ষা করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শুধুমাত্র বলেন, ‘বাঙালি জাতির বুক ফুলিয়ে দাঁড়ানোর দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অনেক অস্ত্রকে অগ্রাহ্য করে খালি হাতে রুখে দাঁড়িয়ে সম্মুখসমরে লড়াই করে নিজেদের জন্য রাষ্ট্র গঠন করেছেন।
‘ফ্যাসিস্ট’ ইউনুসকে তোপ, বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দীর্ঘ বিবৃতি হাসিনার
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে মহম্মদ ইউনুসকে ফ্যাসিস্ট বলে তোপ দাগলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধিতা করছে ইউনুস সরকার। মদত দিচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে। বিজয় দিবসের আগে রবিবার দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন মুজিবকন্যা। সেখানেই তোপ দেগেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে।
সোমবার বিজয় দিবসের ৫৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। সেই উপলক্ষে দীর্ঘ বিবৃতিতে হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি বিন্দুমাত্র সংবেদনশীল নয় মহম্মদ ইউনুস সরকার। তারা পারলে ভিন্ন বয়ান তুলে ধরে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্র থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন মুছে ফেলত। এই সরকার গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। তাদের প্রধান লক্ষ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা এবং তাদের কণ্ঠরোধ করা। বিপরীতে তারা স্বাধীনতা-বিরোধী উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদত দিচ্ছে।
বাংলাদেশে যেভাবে ইউনুস সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই ঘটনাক্রমকে তোপ দেগে মুজিবকন্যা বলেন, ‘দেশবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে। জনতার প্রতি ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকারের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। ক্ষমতায় এসেই তারা জনকল্যাণকর প্রকল্পগুলোতে বাধা দিচ্ছে।’ ২০০৯ সাল থেকে কীভাবে বাংলাদেশের আমজনতার জন্য কাজ করেছে তাঁর সরকার, তার বিশদ বিবরণও বিবৃতিতে তুলে ধরেছেন হাসিনা। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে উঠে এসেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ইউনুস সরকারের আমলে সেসব অতীত। বিবৃতির শেষে হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে বারবার পদানত করেছে বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকেই আবার জয়ী হবে বাঙালি, আশায় মুজিবকন্যা।