বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন অফিসে আক্রমণ আনার চেষ্টায় গ্রেপ্তার সাতজন, বন্ধ ভিসা পরিষেবা

এক সময় সু ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ছিল ভারত ও বাংলাদেশ। সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া থাকলেও বাংলাদেশের সাথে ভারতের ত্রিপুরা সহ অন্যান্য বাংলাভাষী রাজ্যগুলির অটুট সম্পর্ক ছিল। প্রতিবছর দুই দেশের সরকার আম, আনারস এবং ইলিশ উপহার হিসেবে পাঠাতেন। কিন্তু কৌটা আন্দোলনের জন্য গত ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে সেই ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের উপর ফাটল ধরতে শুরু করে। বাংলাদেশে শুরু হয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন। বাড়িঘর ভাঙচুর, মারধর থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। একটা সময় সংখ্যালঘুদের ঐক্য মঞ্চ গড়ে উঠে।

 বাংলাদেশের মাটিতেই শুরু হয় সনাতন ধর্মের মানুষের প্রতিবাদ কর্মসূচি। দাবি উঠে সরকার তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য। কিন্ত ইউনুস খানের অন্তর্বর্তী সরকার মানুষরা নিরাপত্তা তো দূরের কথা, কোন পদক্ষেপ পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। সম্প্রতি সংখ্যালঘু আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশ। তারপরই ধীরে ধীরে প্রতিবাদ শুরু হয় সীমান্তের এপারে। দাবি উঠে সংখ্যালঘু সনাতন আন্দোলনের নেতৃত্ব চিন্ময় প্রভুকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য। কিন্তু তাতে অনভিপ্রেত ঘটনায় কালিমালিপ্ত বাংলাদেশের নির্যাতনকারীরা আরো বেশি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। ভারত বিদ্বেষী বিভিন্ন স্লোগান তুলে এবং ভারতীয় জাতীয় পতাকা অবমাননা করে বলে অভিযোগ। সবচেয়ে আশ্চর্যকর বিষয় হলো বাংলাদেশের পূর্বতন সরকারের আমলে দুই দেশের মৈত্রী সম্পর্ক বজায় রাখতে যে শ্যামলী বাস পরিষেবা চালু হয়েছিল, তার উপরও গত শনিবার আঘাত নামিয়ে আনে কিছু কতিপয় দুষ্কৃতী। বাস ঘিরে অশ্লীল মন্তব্য এবং বাসের যাত্রীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।

 তারপরই প্রতিবাদ আরো বেশি মাইলেজ পায় সীমান্তের এপারে। সোমবার সকালে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন চলার সময় একদল যুবক ভেতরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের হাইকমিশন কার্যালয়ের উপর আক্রমণ আনার চেষ্টা করে। তবে পুলিশের সামনে এই ঘটনার সংগঠিত করার চেষ্টা করায় রাজ্য পুলিশের আধিকারিকরা সাথে সাথে তিন পুলিশ কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এবং এক পুলিশ আধিকারিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। তারপর পুলিশ তদন্তে নেমে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেন। মঙ্গলবার ধৃত সাতজনকে পুলিশ রিমান্ডে তুলে পুলিশ। তারপর বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন অফিস চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।

মোতায়েন করা হয় আধা সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার থেকে নিরাপত্তাহীনতাজনিত অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারি হাইকমিশন আগরতলাতে সকল প্রকার ভিসা কন্স্যুলার সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এই পরিষেবা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভিসা নেওয়ার জন্য ভিড় ছিল বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন অফিস। কিন্তু কেউই ভিসা পায়নি। অনেকে জানায়, এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কেউ কেউ নিজ বাড়িতে ফিরতে চাইছে। কারণ বাংলাদেশে তাদের পরিবার রয়েছে। পরিবারের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ ফিরে যেতে চায় তারা। কিন্তু ভিসা না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েন তারা।