সোনা কেনার আঁতুড়ঘর দুবাই! প্রায়শই শোনা যায়, দুবাই থেকে আসার সময় বিমানযাত্রীর থেকে সোনা উদ্ধার করেছে শুল্ক বিভাগ। এবং অদ্ভুত ভাবে সোনা নিয়ে আসেন তাঁরা। জুতোর তলা থেকে পায়ুদ্বার কোনও জায়গা বাদ পড়ে না, অবৈধ সোনা লুকিয়ে আনার ক্ষেত্রে। কেন শুধু দুবাই? ভারতের থেকে দুবাইয়ে সোনার দাম কম। ট্যাক্সের ছাড় বেশি থাকায় অনেক কম দামে দুবাই থেকে সোনা কিনে আনেন ভারতীয়রা। কিন্তু এই চিত্র বদলাতে চলেছে।
কীভাবে? অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি বছর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ বাজেটে সোনার উপর কাস্টম ডিউটি কমানোর ঘোষণার পর থেকেই একটু একটু সোনা আমদানির চিত্র বদলিয়েছে।
সোনা আমদানিকারী দেশ হিসাবে ভারতের সুনাম রয়েছে। কিন্তু সোনা আমাদানীর ক্ষেত্রে যে অন্তরায় তা হল চড়া দাগের কাস্টম ডিউটি। সোনা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, কেন সরকার কাস্টম ডিউটি কমাচ্ছে না। মন্দা বাজারে গোদের উপর বিষ ফোঁড়া হয়ে দাঁড়ায় এই কাস্টম ডিউটি। একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে গোটা চিত্রটা। ২০২১ সালে করোনার সময় কাস্টম ডিউটি ছিল ১০.৭৫ শতাংশ।
২২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশ। করোনার সময় বেকারত্ব যখন জলন্ত ইস্যু, সে সময় সবচেয়ে বেশি কাস্টম ডিউটির হার। এতে মার খাচ্ছিলেন খুচরো থেকে বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। অনেকেই তাঁদের জীবিকা পরিবর্তন করেন। তবে, কেন্দ্র সেই হার এক ধাক্কায় ৯ শতাংশ কমিয়ে মাত্র ৬ শতাংশ কাস্টম ডিউটি নির্ধারণ করেছে এবারের বাজেটে। এর ফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে ভারতের স্বর্ণ ব্যবসায়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, এই মুহূর্তে দুবাইয়ের মতোই ভারতেও সোনার ব্যবসা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আমদানি শুল্ক কম হওয়ায় আর দুবাইয়ে সোনা কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, সোনার উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট নেওয়া হয় দুবাইয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে কম শুল্ক। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতের তুলনায় এক শতাংশের তফাৎ। গহনার উৎপাদনের খরচ সবচেয়ে সস্তা ভারতে। খুব কম বেতনে কাজ করেন এখানকার স্বর্ণ শ্রমিকরা। আবার গুণগত মানও প্রশংসিত। দুবাইয়ে ‘কলকাত্তি গহনার’ চাহিদা অনেক বেশি। হাতের কাজের দাম রয়েছে কলকাতার শ্রমিকদের। আর এই সব যদি ভারতেই মেলে, তাহলে আরও অনেক কম খরচে গহনা দিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।
ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, জয় অলুক্কাস গ্রুপের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তাঁদের আরব আমিরশাহীর ৫০ শতাংশ ব্যবসা ভারতে ফিরিয়ে আনছেন। ভারতীয়দের দুবাইয়ে গিয়ে সোনা কেনার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সংস্থার চেয়ারম্যান জয় অলুক্কাস।
এবার দুবাইয়ের দামেই গহনা দিতে পারবেন বলে আশাবাদী জয়। তেমনই পপলে অ্যান্ড সন্সের ডিরেক্টর রাজীব পপলে জানাচ্ছেন, মানুষের একটা ধারণা হয়ে গিয়েছে দুবাইয়ে সবচেয়ে সস্তা সোনার গহনা পাওয়া যায়। কিন্তু ভারতে উৎপাদন খরচ এতই কম দুবাইয়ে সঙ্গে অনায়াসেই টেক্কা দেওয়া যেতে পারে। ভারত যেহেতু হলমার্ক নিয়ে কড়াকড়ি গুণগত মান নিয়েও সন্দেহের অবকাশ থাকে না। তাহলে, এবার কি আমরা দেখতে পাব দুবাইয়ের পরিবর্তে সোনা কেনার আঁতুড়ঘর হতে চলেছে ভারত!