১৯ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বন্যার পর ত্রিপুরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন লিমিটেডের অধীন বিদ্যুৎ পরিবহন সংক্রান্ত সমস্ত কাজ যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সম্পাদন করা হয়েছে। শুধুমাত্র পরিকাঠামো জনিত যে সকল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যেমন সাব স্টেশনের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙ্গে পড়া, রিটেইনিং ওয়াল ভেঙ্গে পড়া, ট্রান্সের ক্ষতি সাধন, ট্রান্সমিশন টাওয়ারের ভূমিক্ষয় ইত্যাদির মূল্যায়ন বাবদ ক্ষতিপূরণ ৩৭.২৫৩১ কোটি টাকা রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে স্থায়ী ভাবে কাজে হাত দেওয়া হয়েছে এবং এরই মধ্যে ৫৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বন্যার বিপর্যয় কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে বিদ্যুৎ পরিষেবা। শুক্রবার মহকারনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই তথ্য তুলে ধরেন বিদ্যুৎ, নগর উন্নয়ন ও পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং। তিনি বলেন, বন্যা জনিত কারণে রাজ্যের আটটি জেলায় বিদ্যুৎ দপ্তরের মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৬৩৮ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা।
তার মধ্যে শুধুমাত্র ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের ক্ষতি হয়েছে ৩৭১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। ত্রিপুরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন লিমিটেডের ক্ষতি হয়েছে ৩৭ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। ত্রিপুরা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ক্ষতি হয়েছে ২২৯ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ৩,৬১১ টি. বিদ্যুৎ পরিবাহী তার ছিড়ে গিয়েছে ৫,০৫৭ কিলোমিটার। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে ৬,৮০৩ টি। পাওয়ার ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ৫ টি। আন্ডার গ্রাউন্ড কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪৪. ৫ কিলোমিটার। এলটিএবি ক্যাবল নষ্ট হয়েছে ৮ হাজার ৫২ কিলোমিটার। ব্রেকার নষ্ট হয়েছে ৭২ টি। পিভিসি তার নষ্ট হয়েছে ২,৭৩০ কিলোমিটার। এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মূলত ১৯ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট-এর মধ্যে। বিদ্যুৎ পরিষেবার ক্ষেত্রে এই ব্যাপক বিপর্যয় সামলে উঠে ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড এবং সহযোগী সংস্থা সমূহ ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রায় স্বাভাবিক করে নিয়েছে। তবে অমরপুর এবং বিলোনিয়া বিভাগের কয়েকটি গ্রামীণ এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পুননির্মাণ না হওয়ার কারণে এবং কয়েকটি জায়গায় খুঁটি বসানোর মত পরিস্থিতি না থাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায় নি।
বিলোনিয়ার ঋষ্যমুখ উপ-বিভাগের ধনঞ্জয় নগর ভিলেজ কমিটি এবং রাধানগর এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। তবে বিদ্যুৎ নিগমের কর্মী এবং আধিকারিকেরা লাগাতার ভাবে মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলেছেন। বিদ্যুতের খুটি বসানো এবং তার টানার মত পরিস্থিতি তৈরি হলেই সেখানে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে। সবমিলিয়ে রাজ্যে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৯৯%-র উপর বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। বাদবাকি ১ শতাংশ জায়গায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিষেবা স্বাভাবিক করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের বিষয়ে বলতে গিয়ে দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং জানান বন্যার কারণে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বেশিরভাগ পানীয় জলের উৎস এবং পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে ৪৮ টি ভুপৃষ্টস্ত জল পরিশোধনাগার, ১ হাজার ২৬২ টি গভীর নলকূপ, ২ হাজার ৩৭ টি স্বল্প ব্যাসের গভীর নলকূপ, ৪৩ টি উদ্ভাবনী মূলক প্রকল্প এবং ৬৯. ১৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন। পাশাপাশি ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫৪৩ টি কার্যকরী পানীয় জলের সংযোগেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের মোট আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৭১.৪১ কোটি টাকা। যার মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় ক্ষতি হয়েছে ১৫১.২৫ কোটি টাকা এবং ১৯ টি শহর এলাকায় ২০.১৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে অভিষেক সিং আরও জানান ভয়াবহ বন্যায় ত্রিপুরা রাজ্যের প্রায় সবকটি জেলা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ব্যাহত হয় জনজীবন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রচুর ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি। বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়ন করে দেখা যায় ত্রিপুরায় ২০ টি আরবান, লোকাল বডিতে রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজ, পানীয় জল, পাইপলাইন, বাড়িঘর, পার্ক, মোটর স্ট্যান্ড, যাত্রী ও বাজার শেড মিলে মোট ৭৩.৬৯৩৫ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে।