US Election 2024:
SHARE

ওয়াশিংটন: আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগণনা এখনও শেষ হয়নি। কমলা হ্যারিসের তুলনায় বেশ খানিকটা এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে তিনিই ফের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। এই আবহেই যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সেনেটের দখল নিল ট্রাম্পের দল। নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টিটিভসেও লাল (ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিকে যে রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়) ঝড়ের ইঙ্গিত মিলেছে।

শেষ হাসি হাসলেন ট্রাম্পই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবারও একবার হোয়াইট হাউসে বসতে চলেছেন তিনি। এর মধ্যেই তিনি জয়ের বক্তৃতা দিলেন। বললেন, “আমেরিকার স্বর্ণযুগের সূচনা হতে চলেছে”। একইসঙ্গে অনুপ্রবেশ নিয়েও সুর চড়ালেন তিনি। বললেন, “এবার যেকোনও ভাবে আমেরিকায় অনুপ্রবেশ বন্ধ হবেই”।

আমেরিকার ‘সুইং স্টেট’গুলির গণনা চলছে। চার ঘণ্টা অতিক্রান্ত। ফলের প্রাথমিক প্রবণতা বলছে, ‘সুইং স্টেট’গুলিতেও বাজিমাত করতে চলেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী তথা আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গুরুত্বপূর্ণ সাত প্রদেশের মধ্যে ছ’টিতেই ডেমোক্র্যাটের কমলা হ্যারিসকে পিছনে ফেলে এগিয়ে আছেন তিনিই। তার মধ্যে আবার নর্থ ক্যারোলাইনাতে ইতিমধ্যেই ট্রাম্পকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

আমেরিকার রাজনীতিতে ‘সুইং স্টেট’ বা ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড স্টেট’ নামে পরিচিত সাত প্রদেশের ফলাফল নিয়ে কৌতূহলী বিশ্ব। সেই সাত প্রদেশ হল পেনসিলভেনিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, জর্জিয়া, অ্যারিজ়োনা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং নেভাডা। ‘উইনার টেকস ইট অল’ নীতির কারণে এই সাতটি প্রদেশের ভূমিকা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্ণায়ক হতে চলেছে। এই সাত প্রদেশের মধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনাতে জয় পেয়েছে ট্রাম্প। বাকি ছয় প্রদেশের মধ্যে নেভাডা বাদে বাকি পাঁচটাতেই এগিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী। নেভাডাতে এখনও গণনা শুরু হয়নি।

ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আমেরিকার ফলাফল অনুযায়ী, ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন ২৩০ আসনে। প্রাথমিক প্রবণতা বলছে, সেই তুলনায় কমলা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। তিনি এখনও পর্যন্ত ২০৯ আসনে এগিয়ে। গণনার শেষবেলায় ‘সুইং স্টেট’গুলির ফলাফলই ভোটের ফল ঘোরাতে পারে। উল্লেখ্য, আমেরিকায় সাধারণ ভাবে কিছু প্রদেশ সচরাচর ডেমোক্র্যাটদের, কিছু রিপাবলিকানদের সমর্থন করে। কয়েকটি রাজ্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের ধরাবাঁধা হিসাব চলে না। তারা কখনও ডেমোক্র্যাট, কখনও রিপাবলিকানদের বেছে নেয়। এগুলোই ‘সুইং স্টেট’।

হিন্দুদের পক্ষে ট্রাম্পের টুইট

বিশেষ করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা রিপাবলিকার প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক সাম্প্রতিক টুইট এই মতকে জোরালো করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, “আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর হিংসার তীব্র নিন্দা জানাই। তাদের আক্রমণ করেছে উন্মত্ত জনতা, লুঠপাট করেছে। সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমি ক্ষমতায় থাকলে এটা ঘটত না। কমলা (কমলা হ্যারিল) এবং জো (জো বাইডেন) সারা বিশ্বের এবং আমেরিকার হিন্দুদের উপেক্ষা করেছে। ইসরায়েল থেকে ইউক্রেন, এমনকি আমাদের দক্ষিণ সীমান্তেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। কিন্তু, আমরা আমেরিকাকে আবার শক্তিশালী করব এবং শক্তির মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনব!”

ট্রাম্প-মোদী সমীকরণ – ছড়ি ঘোরাবে ভারত?

আমেরিকা যে বিশ্বের সুপারপাওয়ার, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, ভারতও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দাদা। ভারতকে বাদ দিয়ে এই অঞ্চলে আমেরিকার পক্ষেও কিছু করা সম্ভব নয়। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের যে নির্বাচন হয়েছিল, তার কথাই ধরা যাক। সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কড়া প্রশ্ন তুলেছিল আমেরিকা। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে হাসিনা সরকারের প্রতি নয়া দিল্লির সমর্থনই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমেরিকার কণ্ঠ ধীরে ধীরে খাদে নেমে গিয়েছিল।

ভারতের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের নরমে-গরমে সম্পর্ক। তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। প্রচার পর্বেও বারবার ট্রাম্প নরেন্দ্র মোদীকে ‘চমৎকার মানুষ’, ‘আমার বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছেন। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও জোরালো করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাজেই, ট্রাম্প জয়ী হলে, আমেরিকা-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে ভারত ঢুকে পড়তেই পারে। সেই ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে ইউনুস সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক নাহলে, বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। এক কথায় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে, বাংলাদেশের পক্ষে আর ভারতকে অবজ্ঞা করা সম্ভব হবে না। ভারত নির্ভরতা আরও বাড়বে। অবশ্য, কমলা হ্যারিসের সঙ্গে মহম্মদ ইউনুসের সুসম্পর্ক থাকায়, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত-আমেরিকার মতপার্থক্য বাড়তে পারে।

ইউনুসের বন্ধুরা…

প্রেস সচিব শফিকুল আলম যাই দাবি করুন না কেন, অতীত বলছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট নেতাদের অত্যন্ত ভালে সম্পর্ক। প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০০৯ সালে তাঁকে আমেরিকার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান দিয়েছিলেন। উল্টোদিকে, ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, তিনি খোলামেলা ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। সেই সময়, ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন ইউনুস। তিনি বলেছিলেন, তাঁদের দুজনের রাজনৈতিক মতাদর্শ একেবারে আলাদা। আমেরিকায় ট্রাম্পের জয়কে তিনি ‘সূর্যগ্রহণ’ এবং ‘অন্ধকার সময়’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হয়েই, আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত উঁচু পাঁচিলে ঘিরতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই বিষয়ে এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে ইউনুস বলেছিলেন, ‘দেওয়াল’ তৈরি না করে ট্রাম্পের উচিত উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ‘সেতু’ নির্মাণ করা।

কাজেই, ট্রাম্প জয়ী হলে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে মহম্মদ ইউনুস প্রশাসন এবং বাংলাদেশ।


SHARE