দূর্গা পূজার চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজি ঘিরে অগ্নিগর্ভ উত্তর ত্রিপুরা জেলার কদমতলা থানা এলাকা। রবিবার দুপুর থেকে কয়েক দফায় দুই অংশের মানুষের মধ্যে চলে মারপিট, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ। এবং গুলিতে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যবসায়ীর। ঘটনার সূত্রপাত রবিবার। এদিন আনুমানিক দুপুর বারোটা নাগাদ কদমতলা ব্লক সংলগ্ন ইন্ডিয়ান ক্লাবের সামনে। ক্লাবের সদস্যরা চুরাইবাড়ি কদমতলা সড়কের উপর দাঁড়িয়ে পুজোর চাঁদা সংগ্রহ করছিলেন। সেইসময় একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে চাঁদা দাবি করে।
তারপর গাড়িচালকের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় চাঁদা সংগ্রহকারীদের। তারপর এক মহিলা সহ কয়েকজনকে মারধর করে চাঁদা সংগ্রহকারী। তারপর টাকা মোবাইল সব ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। তাদের মধ্যে কয়েকজনের বাড়িও কদমতলার চল্লিশদ্রুন এলাকায়। ফলে বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক একই সময়ে একই এলাকার দুই যুবক নিজের সামাজিক মাধ্যম কুরুচিকর মন্তব্য করে পোস্ট করে। পরে দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে কদমতলা থানার সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ সংঘটিত করে এক অংশের মানুষ। তারপর অভিযুক্তদের নামধাম দিয়ে কদমতলা থানায় অভিযোগ জানায় আক্রান্ত হওয়া পুরুষ মহিলা। পরে খবর পেয়ে সেখানে জড়ো হতে থাকেন উভয় অংশের মানুষ।
পুলিশকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় এক ঘণ্টার ভেতরে মূল অভিযুক্ত ইন্ডিয়ান ক্লাবের সদস্য নির্মলেন্দু সেন ও দ্বীপজয় নাথকে গ্রেফতারের জন্য। পুলিশ তখন কথা দিয়ে সাথে সাথেই মাঠে নামে। এমত অবস্থায় ডেপুটেশনে আসা কিছু অতি উৎসাহী অসৃঙ্খল যুবক অভিযুক্ত বাপ্পন সেনের বাড়ি সহ অন্য দুটি বাড়িতে এবং কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ঢিল ছুড়ে এবং ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন জেলা পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী।
তিনি প্রতিবাদকারীদের আশ্বস্ত করেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তখন কদমতলা বাজার এলাকায় পরিস্থিতি ছিল থমথমে, নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। এদিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই অভিযুক্তকে আটক করতেও সক্ষম হয় বলে দাবি পুলিশের। অপরদিকে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়াতে কদমতলা বাজার এলাকার দোকানপাট একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়।প্রতিবাদকারীরাও ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে।
পরবর্তী সময়ে এক অংশের কিছু লোকজন জড়ো হয়ে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদ জানান কদমতলা থানার সামনে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ফের মৃদু লাঠিচার্জ করে। এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ, টিএসআর ও সিআরপিএফ বাহিনীর জোয়ানদের। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ১৬৩ ধারা জারি করা হয়। গোটা কদমতলা থানা এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে এদিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কদমতলা বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর করা হয় বলে অভিযোগ।
তাছাড়া একটি ভুয়ো খবর ছড়ায় যে কদমতলা বাজার মসজিদে আক্রমণ হতে পারে। এমন খবরে এক অংশের লোকজন জড়ো হয় কদমতলা বাজার এলাকায় এবং তারা পাল্টা ভাংচুর চালায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে। পরে পুলিশ ঘটনা সামাল দিতে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছুড়ে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ধৈর্য হারা হয়ে গুলি চালায়। এই গুলিতে কদমতলা বাজারের একটি মোবাইলের দোকানের মালিক শাহীন চৌধুরীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। অপর এক ব্যক্তির পায়ে গুলি লাগে। তাছাড়া বেশ কয়েকজন অল্পবিস্তর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে পুলিশি প্রহরায় রাত কাটলেও সোমবার সকালে ফের কয়েকটি দোকান ভাংচুর করা হয় এবং একটি দোকানে অগ্নি সংযোগ ঘটে। যদিও দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে অশান্ত কদমতলা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনিক উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের পর গোটা এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মোড়ে নেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে সেনার টহলদারি।সামাজিক মাধ্যমে কেউ যাতে বিভ্রান্তিকর বা উস্কানিমূলক লেখা বা ভিডিও পোস্ট না করে তার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। আইন লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।